Monday 5 July 2021

Railway and nature beautiful //সুন্দর রেলওয়ে এবং প্রকৃতি



 

ভারতেরও এক রহস্যজনক ত্রিভূজ রয়েছে। এইটিকে বলা হয়ে থাকে আমাদের ভারতের একমাত্র ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’!

 


ভারতেরও এক রহস্যজনক ত্রিভূজ

রয়েছে। এইটিকে বলা হয়ে থাকে
আমাদের ভারতের একমাত্র
‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’!
বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এ এমনই এক গোলকধাঁধা যা মানুষকে চিরকাল বিস্মিত করেছে। জাহাজ হোক বা বিমান— এই অঞ্চলে এক বার ঢুকলে তার হদিশ মিলত না। ১৯৪৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একাধিক রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে এই অঞ্চলে। এই কাল্পনিক ত্রিভূজের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা বহু জাহাজ এবং বিমান রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে। কোনওটির ধ্বংসাবশেষ পরে উদ্ধার হয়েছে, কোনওটির আবার আজ পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি। এক সময় মনে করা হত এটি আসলে অশুভ শক্তির ডেরা। সে কারণেই একে ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গল বলা হত। কিন্তু পরবর্তীকালে এর রহস্যের সমাধান হয়। এ সমস্ত রহস্যের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির খোঁজ মেলে। কিন্তু জানেন কি বিশ্বে এ রকম আরও ত্রিভূজ রয়েছে? আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো ভারতেরও এমনই এক রহস্যজনক ত্রিভূজ রয়েছে। তাকে ‘ভারতের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ বলা হয়।
‘ভারতের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ যে তিন কাল্পনিক বিন্দু নিয়ে গঠিত হয়েছে তার একটি বিন্দু রয়েছে ওড়িশার আমারদা রোড এয়ারফিল্ডে, দ্বিতীয় বিন্দু রয়েছে ঝাড়খন্ডের চাকুলিয়ায় এবং তৃতীয় বিন্দুটি রয়েছে বাঁকুড়ার কাছে পিয়ারডোবায়। এই তিনটি কাল্পনিক বিন্দু যোগ করলে একটি ত্রিভূজ তৈরি হয়। এই কাল্পনিক ত্রিভূজই হল ভারতের রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। গত ৭৪ বছর ধরে এই ত্রিভূজের রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি। এই অঞ্চল ভারতীয় বায়ুসেনার অধীন হওয়ায় এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশও করা হয়নি সে ভাবে। যদিও ভারতীয় বায়ুসেনা জানায়, প্রতিটি দুর্ঘটনারই তদন্ত হয়েছে।এই অঞ্চলে অন্তত ১৬টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই যুদ্ধবিমান। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ২৫ জনের।
ওড়িশার আমারদা রোড বিমানঘাঁটি গড়ে উঠেছিল স্বাধীনতার আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে। ১৯৪০ সালে ৩ কোটি টাকা খরচ করে গড়ে উঠেছিল এই বিমানঘাঁটি। ৬০০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই ঘাঁটি এখন পরিত্যক্ত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অন্যতম ব্যস্ত বিমানঘাঁটি ছিল এটি। ওড়িশার আমারদা রেল স্টেশনের খুব কাছে থাকার জন্য এই বিমানঘাঁটির নাম রাখা হয় আমারদা রোড এয়ারফিল্ড। যা ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার রাসগোবিন্দপুর গ্রামের কাছে রয়েছে। ১৯৪৪ সালের ৪ মে প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে এই অঞ্চলে। আমেরিকার লিবারেটর যুদ্ধবিমান এবং হার্ভার্ড দি হাভিল্যান্ড বিমানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুই বিমানের ৪ জন সদস্য মারা যান। এর ৩ দিন পর ফের আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ১০ জনকে নিয়ে উড়ান নেওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় একটি বিমান। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ফের আরও একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর আরও একটি যুদ্ধবিমান রহস্যজনক ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৫ সালে। ব্রিটিশ রয়্যাল যুদ্ধবিমান বি-২৪ লিবারেটর এবং অন্য আরও দুই যুদ্ধবিমানের সংঘর্ষ হয়। এই ভাবে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত শেষ দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালে। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই দু’টি বিষয় একই ছিল। প্রথমত, বিমানগুলির মধ্যে কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ ছিল না এবং দ্বিতীয়ত, আবহাওয়াও পরিষ্কার ছিল। আমারদা বিমানঘাঁটি ঝাড়খণ্ডের খুব কাছে অবস্থিত। ঝাড়খণ্ডের যদুগোড়ার কাছে ইউরেনিয়ামের খনি রয়েছে। ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় মৌল। এর তেজস্ক্রিয়তার ফলে আশেপাশের যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই এলাকার মধ্যে প্রবেশ করলেই বিমানের র‌্যাডার কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেই কারণে যাবতীয় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হয়। যদিও এর প্রকৃত কারণ আজও অজানাই রয়ে গিয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ- আনন্দবাজার পত্রিকা